সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথা বলার মধ্যে লজ্জা-শরমের কিছু নেই। তবে এমন কিছু বলতে হলে যুক্তি-প্রমাণ ও মনোবল সহকারে বলতে হবে। একটি বিষয় কেন ভুল বা অবৈজ্ঞানিক বা সাংঘর্ষিক–সেটা শক্তিশালি যুক্তি দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। শুধু শুধু জঙ্গলের আশেপাশে পিটিয়ে কোন লাভ হবে না। আরো উল্লেখ্য যে, একটি আয়াত দিয়ে কোরআনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগকে যদি প্রমাণ করা সম্ভব না হয় তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণ কোরআন দিয়েও প্রমাণ করা সম্ভব নয়। যেমন কেউ যদি একটি আয়াত দিয়ে কোরআনের পৃথিবীর ঘুর্ণনকে থামিয়ে দিতে না পারে তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণ কোরআন দিয়েও সেটা করা সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে, একটি আয়াত দিয়ে কোরআনের পৃথিবীর আকারকে ডিস্কের মতো সমতল বানানো না গেলে সম্পূর্ণ কোরআন দিয়েও কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। অথচ কোরআনের বিরুদ্ধে প্রায় প্রত্যেকটি অভিযোগকে প্রমাণ করার জন্য একাধিক আয়াতের সাথে হাদিস পর্যন্ত নিয়ে এসে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলে ইচ্ছাকৃতভাবে লেখার কলেবড় বাড়ানো হয়। এগুলো হচ্ছে এক ধরণের অসততা–অজ্ঞ পাঠকদেরকে বিভ্রান্ত করার ধান্দা। এই ধরণের লেখার জবাব দেয়াও বেশ কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। যাহোক, এই লেখাতে কোরআনের বিরুদ্ধে প্রায় সবগুলো প্রচলিত অভিযোগের জবাব দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ-১: আয়াত ২২:৪৭ অনুযায়ী আল্লাহর এক দিন আমাদের ১০০০ বছরের সমান। অথচ আয়াত ৭০:৪ অনুযায়ী আল্লাহর এক দিন আমাদের ৫০,০০০ বছরের সমান। অতএব বিষয় দুটি সাংঘর্ষিক!
22.47: Verily a Day in the sight of thy Lord is like a thousand years of your reckoning.
70.4: The angels and the spirit ascend unto him in a Day the measure whereof is (as) fifty thousand years.
জবাব: প্রথমত, সূরা দুটি ভাল করে পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে, দুটি বিষয়ের প্রসঙ্গ আলাদা। প্রথম আয়াতে মানুষের কথা বলা হয়েছে এবং দ্বিতীয় আয়াতে অ্যাঞ্জেল ও স্পিরিটের কথা বলা হয়েছে। অতএব কোন অসঙ্গতি নেই। দ্বিতীয়ত, এক জায়গাতে ১০০০ আর অন্য জায়গাতে ৫০,০০০ লিখা থাকলেই সাংঘর্ষিক হয় না। ধরা যাক, কেউ দু’সময়ে দু’রকম বক্তব্য দিলেন: (১) আমি ঢাকা থেকে কলকাতায় গিয়েছি ১ ঘন্টায়; (২) আমি ঢাকা থেকে কলকাতায় গিয়েছি ১৬ ঘন্টায়। সাদা চোখে দেখলে বক্তব্য দুটিকে সাংঘর্ষিক মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। কারণ প্রথম বক্তব্যে এরোপ্লেন এবং দ্বিতীয় বক্তব্যে ট্রেন ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও যানবাহনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। কোরআনের আয়াতগুলোতে যানবাহন বা তার গতির কথা লিখা নেই। আয়াতগুলোতে এটাই বুঝাতে চাওয়া হয়েছে যে, স্রষ্টার সময়ের সাথে পার্থিব সময়ের কোন তুলনা হয় না। সেটা বুঝানোর জন্য কিছু উদাহরণও দেয়া হয়েছে। বিষয়টিকে আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায়।
অভিযোগ-২: আয়াত ৫৪:১৯, ৬৯:৭, ও ৪১:১৬ একে-অপরের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ একেক আয়াতে একেক রকম সময় লিখা আছে!
54.19: For We sent against them a furious wind, on a Day of violent Disaster.
69.7: He made it rage against them seven nights and eight days in succession: so that thou couldst see the (whole) people lying prostrate in its (path), as they had been roots of hollow palm-trees tumbled down!
41.16: So We sent against them a furious Wind through days of disaster, that We might give them a taste of a Penalty of humiliation in this life; but the Penalty of a Hereafter will be more humiliating still: and they will find no help.
জবাব: আয়াতগুলো মোটেও সাংঘর্ষিক নয়। কারণ প্রথম আয়াতে কোন এক দিন দৈবদুর্বিপাক পাঠানোর কথা বলা হয়েছে–অর্থাৎ দৈবদুর্বিপাক শুরুর দিন। দ্বিতীয় আয়াত অনুযায়ী সেই দৈবদুর্বিপাক পর পর সাত রাত ও আট দিন ধরে স্থায়ী ছিল। তৃতীয় আয়াতে যেহেতু সময়ের উল্লেখ নেই সেহেতু এখানেও সাত রাত ও আট দিন ধরে নেয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোন এক এলাকাতে সোমবার দৈবদুর্বিপাক শুরু হয়েছিল এবং সেটি সাত দিন স্থায়ী ছিল। অতএব কোন অসঙ্গতি নেই।
অভিযোগ-৩: আয়াত ৩:৪২ অনুযায়ী মাতা মেরির সাথে একাধিক ফেরেশতা কথা বলেছেন অথচ আয়াত ১৯:১৭ অনুযায়ী একজন। তাহলে কোন্টা সঠিক?
3.42: When the angels said: O Mary! Lo! God hath chosen thee and made thee pure, and hath preferred thee above (all) the women of creation.
19.17: We sent unto her Our Spirit (Jibrael) and it assumed for her the likeness of a perfect man.
জবাব: প্রকৃতপক্ষে দুটোই সঠিক। কারণ দুটি আয়াতের প্রসঙ্গ-স্থান-কাল-পাত্র আলাদা। প্রথম আয়াতে অ্যাঞ্জেল্স্ এবং দ্বিতীয় আয়াতে স্পিরিট এর কথা বলা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে স্পিরিট বলতে জীব্রাঈল ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়াও প্রথম আয়াতের বক্তা হচ্ছেন অ্যাঞ্জেল্স্ এবং দ্বিতীয় আয়াতের বক্তা হচ্ছেন আল্লাহ নিজে। অধিকন্তু, প্রথম আয়াত অনুযায়ী একাধিক ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধিও কথা বলতে পারেন। অতএব কোন অসঙ্গতি নেই।
অভিযোগ-৪: কোরআনে মাতা মেরিকে প্রফেট মূসার ভাই অ্যারন এর বোন হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে (১৯:২৮)। কিন্তু মাতা মেরি তো অ্যারনের নিজের বোন নয়!
জবাব: হাদিসে এই বিভ্রান্তির জবাব দেয়া হয়েছে। অ্যারাবিকে বোন বা পুত্রকে বংশধরও বলা হয়। বাইবেলেও একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে।
অভিযোগ-৫: কোরআনে যেহেতু বলা হয়েছে যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ভ্রুণের সেক্স কেউ জানতে পারবে না সেহেতু আলট্রাসনোগ্রাম এর বদৌলতে কোরআন ভুল প্রমাণিত হয়েছে!
31.34: Verily the knowledge of the Hour is with God (alone). It is He Who sends down rain, and He Who knows what is in the wombs. Nor does any one know what it is that he will earn on the morrow: Nor does any one know in what land he is to die. Verily with God is full knowledge and He is acquainted (with all things).
জবাব: ভ্রুণের ‘সেক্স’ তো দূরে থাক আয়াতের কোথাও ‘ভ্রুণ’ শব্দটাই উল্লেখ নেই। এমনকি যুক্তির খ্যাতিরে গর্ভাশয়ে ‘ভ্রুণ’ ধরে নিলেও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করার রুম রয়ে গেছে। যেমন: শিশু বাচ্চাটি বিশ্বাসী নাকি অবিশ্বাসী হবে; ভালো নাকি মন্দ হবে; ইঞ্জিনিয়ার নাকি ডাক্তার হবে; ইত্যাদি। সুতরাং ভুল ধরার মতো কোন রকম রুম-ই যে রাখা হয়নি। তাছাড়াও এ-কথা কিন্তু বলা হয়নি যে, গর্ভাশয়ের মধ্যে কী আছে সেটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারবে না।
অভিযোগ-৬: আয়াত ২:২৯ অনুযায়ী পৃথিবী আগে এবং আকাশমন্ডলী পরে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ আয়াত ৭৯:২৭-৩০ অনুযায়ী আকাশমন্ডলী আগে এবং পৃথিবী পরে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। অতএব বিষয় দুটি পরস্পর-বিরোধী!
2.29: It is He Who hath created for you all things that are on earth; Moreover His design comprehended the heavens, for He gave order and perfection to the seven firmaments; and of all things He hath perfect knowledge.
79.27-30: What! Are ye the more difficult to create or the heaven (above)? (God) hath constructed it. On high hath He raised its canopy, and He hath given it order and perfection. Its night doth He endow with darkness, and its splendour doth He bring out (with light). And the earth, moreover, hath He extended (to a wide expanse).
জবাব: প্রথমত, আয়াতগুলোতে আসলে পৃথিবী ও আকাশমন্ডলী সৃষ্টির কথা বলা হয়নি। বরঞ্চ সৃষ্টির পরবর্তীতে পৃথিবীর উপরিভাগে সৃষ্ট জিনিস এবং আকাশমন্ডলীর ডিজাইন, অর্ডার, ও পারফেকশনের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কোন আয়াতেই সুস্পষ্ট করে ক্রোনলজিক্যাল অর্ডার উল্লেখ নেই। আরও লক্ষ্যণীয় যে, প্রথম আয়াতে আকাশমন্ডলী (বহুবচন) এবং দ্বিতীয় আয়াতে আকাশ (একবচন) উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরও পরস্পর-বিরোধী হয় কীভাবে!
অভিযোগ-৭: কোরআনে যেহেতু পঙ্কিল জলাশয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার কথা লিখা আছে (১৮:৮৬) সেহেতু অবৈজ্ঞানিক!
[Pickthal]: When he (Zul-Qarnain) reached the setting-place of the sun (black sea), he found it setting in a muddy spring, and found a people thereabout. We said: O Dhu’l-Qarneyn! Either punish or show them kindness.
[Asad]: When he came to the setting of the sun, “it appeared to him (Zul-Qarnain) that it was setting in a dark, turbid sea;” and nearby he found a people [given to every kind of wrongdoing]. We said: “O thou Two-Horned One! Thou mayest either cause [them] to suffer or treat them with kindness!”
জবাব: প্রথমত, কোরআনের কোথাও আল্লাহ নিজে পঙ্কিল জলাশয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার কথা বলেননি। যুলকার্নাইন যা দেখেছেন তার বর্ণনা দেয়া আছে। দ্বিতীয়ত, এই আয়াত অনুযায়ী সূর্যাস্তের ‘সময়’ অথবা ‘স্থান’ যে কোনটি হতে পারে। আয়াতটির সঠিক অনুবাদ হবে ‘It appeared to him.’ তবে ‘He found’ বা ‘It appeared to him’ যেটাই হোক না কেন, আল্লাহ কিন্তু যুলকার্নাইন যা দেখেছেন সেটাই বর্ণনা করেছেন। তৃতীয়ত, একদম প্রথম থেকেই সূর্যকে একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড হিসেবে মানুষ জেনে এসেছে। এজন্য সূর্যকে ‘সান গড’ হিসেবে ওয়ার্শিপও করা হয়। সেই জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড প্রতিদিন সন্ধায় পানিতে ডুব দিয়ে পরদিন সকালে আবার পানি থেকে জ্বলে ওঠে!?! নিতান্তই হাস্যকর! যারা কোরআনের এই আয়াত পড়ে সূর্যকে আক্ষরিক অর্থে পানিতে ডুবা-উঠা বোঝেন তাদের যৌক্তিকতা ও সততা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের বর্ণনাটি এসেছে আসলে প্রচলিত কথা-বাত্রার উপর ভিত্তি করে। লোকজন সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য কিন্তু ঠিকই সমুদ্রের তীরে যায়। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় জানার জন্য ঠিকই পেপার-পত্রিকা পড়ে। অথচ একই কথা কোরআনে লিখা থাকাতে অবৈজ্ঞানিক অবৈজ্ঞানিক বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করা হয়–যাকে বলে দ্বৈত নীতি। পক্ষপাতদুষ্ট অথবা মস্তকধোলাই না হলে আয়াতটি পড়ে কারো মনেই সন্দেহের উদ্রেক হওয়ার কথা নয়। কারণ সংশয় করার মতো আদপেই কিছু নেই। সংশয়েরও তো মা-বাপ থাকা উচিত! যে কেউ আয়াতটির আগে-পরে কিছু আয়াত পড়লে বুঝতে পারবেন যে, বিষয়টিকে একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতটিকে এভাবেও বর্ণনা করা যায়: When he reached at Cox’s Bazar Sea beach (a sun setting place), he found the sun setting in the Bay of Bengal. সমস্যাটা কোথায়? আরো মজার কাহিনী হচ্ছে, সূর্যকে যদি সত্যি সত্যি পানিতে ডুব দেয়ার কথা বলা হতো এবং পৃথিবীকে যদি সত্যি সত্যি সমতল ও অনড় মনে করা হতো, যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাহলে তো সূর্য পশ্চিম দিকে ডুব দিয়ে আবার পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হওয়ার কথা। অনুরূপভাবে, পূর্বদিকে ডুব দিকে আবার পূর্বদিক থেকেই উদিত হওয়ার কথা। কোরআনে এরকম কিছু কি বলা আছে যে, সূর্য পশ্চিম দিকে ডুব দিয়ে পৃথিবীর নীচ দিয়ে দৌড় দিয়ে গিয়ে পূর্বদিক থেকে উদিত হয়? তবে বাইবেলে কিন্তু আছে। দেখুন: “The sun also ariseth, and the sun goeth down, and hasteth to his place where he arose.” (Ecclesiastes 1:5) প্রফেট মুহাম্মদ বাইবেলের এই ‘চমৎকার’ আয়াতটি কপি করলেন না কেন, যেভাবে অপপ্রচার চালানো হয়! কোরআন কিন্তু এবার অন্ধ-সমালোচকদেরকে বোবা-কালাও বানিয়ে দিল!
অভিযোগ-৮: কোরআনে আকাশকে সলিড মনে করা হয়েছে (৩১:১০)। তা না হলে পিলারের প্রশ্ন আসবে কেন!
31.10: He created the heavens without any pillars that ye can see; He set on the earth mountains standing firm, lest it should shake with you; and He scattered through it beasts of all kinds. We send down rain from the sky, and produce on the earth every kind of noble creature, in pairs.
জবাব: প্রথমত, কোরআনের কোথাও আকাশকে সলিড বলা হয়নি। দ্বিতীয়ত, কোরআনে সাধারণতঃ ‘হেভেন্স (বহুবচন)’ বলতে পৃথিবী ছাড়া সম্পূর্ণ মহাবিশ্বকে এবং ‘হেভেন/স্কাই (একবচন)’ বলতে আকাশকে বুঝানো হয়েছে। অতএব আয়াতের প্রথম অংশে ‘হেভেন্স’ বলতে গ্রহ-নক্ষত্রকে বুঝানো হয়েছে, আকাশকে নয়। আয়াতের দ্বিতীয় অংশে আকাশ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা অন্য অর্থে। তাছাড়া এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য পটভূমিকা জানারও দরকার আছে। যেমন বাইবেল অনুযায়ী হেভেন্স এর পিলার আছে (Job 26:11)। ফলে সেই সময়ের অনেকেই হয়তো তা-ই বিশ্বাস করতো। কোরআনে বিষয়টিকে সংশোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ কোরআনে বলতে চাওয়া হয়েছে যে, হেভেন্স এর যে কোন পিলার নাই সেটা তো দেখাই যাচ্ছে! কোরআনে এভাবে আরো কিছু প্রচলিত বিশ্বাসকে সংশোধন করা হয়েছে।
অভিযোগ-৯: কোরআনে আকাশকে শামিয়ানা (সলিড ছাদ) বলা হয়েছে (২:২২)–অতএব অবৈজ্ঞানিক!
2.22: Who hath appointed the earth a resting-place for you, and the heaven/sky a canopy; and causeth water to pour down from the sky, thereby producing fruits as food for you. And do not set up rivals to God when ye know (better).
জবাব: আগেই বলা হয়েছে যে, কোরআনের কোথাও আকাশকে ‘সলিড ছাদ’ বলা হয়নি। সলিড ছাদ ব্যবহার করা হয় মূলতঃ বৃষ্টির পানি ও সূর্যের আলো থেকে রক্ষার জন্য। ফলে আকাশকে ‘সলিড ছাদ’ মনে করা হলে সেই ছাদ ভেদ করে আবার বৃষ্টির পানি ও সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসে কীভাবে! কমন-সেন্স! কোরআনে ‘ক্যানোপি’ শব্দটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ক্যানোপি শব্দের অর্থ শামিয়ানা বা মশারি। শামিয়ানা ব্যবহার করা হয় মূলতঃ সূর্যের ক্ষতিকর ও প্রখর তাপ থেকে রক্ষার জন্য। অর্থাৎ শামিয়ানা ভেদ করে সূর্যের আলো যেমন ভেতরে আসতে পারে তেমনি আবার সেই আলোর প্রখরতাও কমে যায়। মশারিও এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন একদিকে ক্ষতিকর মশার হাত থেকে রক্ষা হয় অন্যদিকে আবার মশারির মধ্যে আলো-বাতাসও ঢুকতে পারে–যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা। অনুরূপভাবে, কোরআনে আকাশকে ‘শামিয়ানা’ বলতে একদিকে যেমন ক্ষতিকর কিছুর হাত থেকে রক্ষার কথা বলা হয়েছে (যেমন ক্ষতিকর রশ্মি) অন্যদিকে আবার শামিয়ানা ভেদ করে সূর্যের আলো আসার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যেটি ১৪০০ বছর আগে কোনভাবেই জানা সম্ভব ছিল না। এবার আয়াতটা কিন্তু সমালোচকদের দিকেই বুমেরাং হওয়ার কথা (21:32 And We have made the heaven/sky a guarded canopy and yet they turn aside from its signs.)!
অভিযোগ-১০: আয়াত ১৭:১০৩ অনুযায়ী ফেরাউন পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল অথচ আয়াত ১০:৯২ অনুযায়ী জীবিত ছিল! অতএব আয়াত দুটি পরস্পর-বিরোধী!
17.103: When he pursued them, as he chased them out of the land, We drowned him, together with those who sided with him, all of them.
10.92: “Today, We will preserve your body, to set you up as a lesson for future generations.” Unfortunately, many people are totally oblivious to our signs.
জবাব: আয়াত দুটি ভাল করে পড়লে যে কারো বোঝা উচিত যে, প্রথম আয়াত অনুযায়ী ফেরাউন পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল এবং দ্বিতীয় আয়াতে তার দেহ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। পরস্পর-বিরোধীতার তো কোন নাম গন্ধও নেই!
অভিযোগ-১১: কোরআনে শুটিং স্টার নিক্ষেপ করে ডেভিলদের তাড়া করার কথা লিখা আছে–অতএব অবৈজ্ঞানিক!
67.5: And verily We have beautified the world’s heaven with lamps, and We have made them missiles for the devils, and for them We have prepared the doom of flame.
37.6-8: Lo! We have adorned the lowest heaven with an ornament, the planets. With security from every froward devil. They cannot listen to the Highest Chiefs for they are pelted from every side.
জবাব: প্রথমত, আয়াতে ‘শুটিং স্টার’ বলে কিছু নেই; ল্যাম্প বা প্ল্যানেট লিখা আছে। দ্বিতীয়ত, ল্যাম্প বা প্ল্যানেট নিক্ষেপ করার কথা লিখা নেই।। তৃতীয়ত, এই আয়াতগুলো একেক জন অনুবাদক একেক ভাবে অনুবাদ করেছেন। চতুর্থত, অদৃশ্য জ্বীন বা ডেভিল যে কী ধরনের ক্রীয়েচার–বাস্তবে তাদের কোন অস্তিত্ব আছে কি-না–সেটা এখন পর্যন্তও জানা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরাও জোর দিয়ে এর স্বপক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলতে পারবেন না। পঞ্চমত, এরকম ঘটনা কোথায় সংঘটিত হয় বা হয়েছে তারও সুস্পষ্ট কোন ইঙ্গিত নেই। অতএব বিষয়টিকে অবৈজ্ঞানিক বলার কোন পথ-ই যে খোলা নেই! ল্যাম্প বা প্ল্যানেট তো এমনি এমনি মুভ করে
অভিযোগ-১২: কোরআনে ছয় দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা লিখা আছে (৭:৫৪)। অথচ বিজ্ঞান অনুযায়ী এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে অনেক বেশী সময় লেগেছে। অতএব কোরআনের বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক!
[SHAKIR]: Surely your Lord is God, Who created the heavens and the earth in six periods of time, and He is firm in power.
[ASAD]: VERILY, your Sustainer is God, Who has created the heavens and the earth in six aeons, and is established on the Throne of His almightiness.
[Malik]: Surely your Lord is God Who created the heavens and the earth in six Yõme (time periods) and is firmly established on the throne of authority.
[Maulana Ali]: Surely your Lord is God, Who created the heavens and the earth in six periods, and He is established on the Throne of Power.
জবাব: বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা প্রসঙ্গে বাইবেলে বলা হয়েছে, স্রষ্টা ছয় দিনে বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন। এটাকে সাবাথ বা বিশ্রাম দিবস বলা হয়–ঠিক সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মতো। এমনকি বাইবেলে সকাল-সন্ধ্যাও উল্লেখ আছে। ফলে কোরআনের কিছু কিছু অনুবাদক ক্রিস্টিয়ানদের সর্বত্র প্রচলিত ‘ছয় দিনে বিশ্বসৃষ্টি’ বিশ্বাসের সাথে মিল রেখে কোরআনের এই আয়াতগুলোর অনুবাদ করেছিলেন। কিন্তু অনেক স্কলারের মতে কোরআনে ব্যবহৃত অ্যারাবিক শব্দের প্রকৃত অর্থ হওয়া উচিত ‘স্টেজ’ বা ‘পিরিয়ড’ বা ‘কাল।’ যাহোক, বাইবেলের মতো কোরআনে যেহেতু সকাল-সন্ধ্যা তথা চব্বিশ ঘন্টায় দিন উল্লেখ নেই এবং ‘সপ্তম দিন’ কে যেহেতু গুরুত্ব সহকারে ‘বিশ্রাম দিবস’ উল্লেখ করা হয়নি সেহেতু ‘Six Stages’ অথবা ‘Six Periods’ মেনে নিতে কারো সমস্যা থাকার কথা নয়। কোরআনের এই আয়াতগুলোতে আসলে প্রচলিত অর্থে সপ্তাহের ‘ছয় দিন’ বুঝানো হয়নি, যেটি বাইবেলে বুঝানো হয়েছে। কারণ কোরআনে ‘সপ্তম দিন’ বা ‘বিশ্রাম দিন’ বলে কিছু নেই।
অভিযোগ-১৩: কোরআনে নক্ষত্রপুঞ্জকে নীচের হেভেনে (৪১:১২) এবং চন্দ্রকে মধ্যভাগে (৭১:১৫-১৬) স্থাপনের কথা বলা হয়েছে–অতএব অবৈজ্ঞানিক!
41.12: So He completed them as seven heavens in two Days, and He assigned to each heaven its duty and command. And We adorned the lower heaven with lights, and (provided it) with guard.
71.15-16: See ye not how God hath created seven heavens in harmony; And hath made the moon a light therein, and made the sun a lamp?
জবাব: প্রথমত, কোরআনে হেভেন বা আকাশকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। একেক জন একেক ভাবে ব্যাখ্যা করেন। দ্বিতীয়ত, কোরআনে পৃথিবীকে বেজ বা রেফারেন্সও বলা হয়নি। ফলে ‘নীচ’ বা ‘উপর’ বলতে ঠিক কোন্ রেফারেন্স এর ভিত্তিতে বুঝানো হয়েছে সেটা বলা মুশকিল।। তৃতীয়ত, ইউসুফ আলী ছাড়া অন্যান্য অনুবাদে চন্দ্রকে ‘মধ্যভাগে’ স্থাপনের কথাও লিখা নেই। একটি মাত্র অনুবাদ দেখেই তড়িঘড়ি করে মহা সিদ্ধান্তে পৌঁছলেই তো আর কোরআন অবৈজ্ঞানিক প্রমাণিত হবে না! অতএব, বিষয়টিকে কোনভাবেই অবৈজ্ঞানিক বলা যাবে না
অভিযোগ-১৪: কোরআনে যেহেতু পর্বতমালাকে ভূমিকম্প প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে সেহেতু অবৈজ্ঞানিক (২১:৩১, ১৬:১৫)!
21.31: And We have set on the earth mountains standing firm, lest it should shake with them, and We have made therein broad highways (between mountains) for them to pass through: that they may receive Guidance.
16.15: And He has set up on the earth mountains standing firm, lest it should shake with you; and rivers and roads; that ye may guide yourselves.
জবাব: প্রথমত, কোরআনের কোথাও পর্বতমালাকে ভূমিকম্প প্রতিরোধ করার কথা বলা হয়নি। আয়াতে বলা হয়েছে “Lest it (the earth) should shake with you.” দ্বিতীয়ত, যদিও পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর দ্রুত বেগে ঘুরছে তথাপি পৃথিবীকে স্থির তথা অনড় মনে হয়।। কোরআনে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগে পর্বতমালা স্থাপন করে ঝাঁকুনিকে প্রতিরোধ করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও পর্বতমালাকে স্ট্যাবিলাইজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ এই আয়াতগুলো নিয়েই বছরের পর বছর ধরে বোকার মতো বেশ হাসি-তামাসা ও কৌতুক করা হচ্ছে! পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ ফুটবল বা বেলুনের মত মসৃণ হলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে হয়তো ঝাঁকুনির সৃষ্টি হতো
অভিযোগ-১৫: কোরআনে চন্দ্র ও সূর্য একই কক্ষপথে আবর্তনের কথা বলা হয়েছে (৩৬:৪০) এবং সেই সাথে মহাবিশ্বকে ভূ-কেন্দ্রিকও মনে করা হয়েছে (৩১:২৯)!
36.40: It is not permitted to the Sun to catch up the Moon, nor can the Night outstrip the Day: Each (just) swims along in (its own) orbit (according to Law).
31.29: Seest thou not that God merges Night into Day and he merges Day into Night; that He has subjected the sun, and the moon (to his Law), each running its course for a term appointed; and that God is well-acquainted with all that ye do?
জবাব: কোরআনের কোথাও চন্দ্র ও সূর্য একই কক্ষপথে আবর্তনের কথা লিখা নেই। তবে সে সময় মানুষ এমন কিছুতে বিশ্বাস করতে পারে।। অন্যথায় চন্দ্র ও সূর্য একে-অপরকে ধরার প্রশ্ন আসতো না। তাছাড়া কেউ যদি অনুমান করে বলেন: The sun cannot cause the moon to gravitate towards itself and the night and the day cannot lengthen or shorten other than the appointed measure–সেক্ষেত্রেও কিন্তু কারোরই কিছু বলার থাকবে না।।। আর এ কারণেই ভূ-কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের বিশ্বাসে আঘাত হানার কারণে ক্রিস্টিয়ান চার্চ বিজ্ঞানীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। কোরআনে বিষয়টিকে সংশোধন করা হয়েছে অনুরূপভাবে, কোরআনের কোথাও মহাবিশ্বকে যেমন ভূ-কেন্দ্রিক বলা হয়নি তেমনি আবার সূর্যকে পৃথিবীর চারিদিকে আবর্তনের কথাও লিখা নেই ভূ-কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা এসেছে গ্রীক ফিলোসফি ও বাইবেল থেকে
অভিযোগ-১৬: নীচের আয়াত দুটি পরস্পর-বিরোধী। কারণ প্রথম আয়াতে হেভেন্স ও পৃথিবীকে পৃথক করার কথা লিখা আছে অথচ দ্বিতীয় আয়াতে আবার তাদের একত্রিত করার কথা বলা হয়েছে!
21.30: Have not those who disbelieve known that the heavens and the earth were of one piece, then We parted them, and we made every living thing of water?
41.11: Then turned He to the heaven when it was smoke, and said unto it and unto the earth: Come both of you, willingly or loth. They said: We come, obedient.
জবাব: আয়াত দুটির প্রসঙ্গ আলাদা। প্রথম আয়াতে মহাবিশ্বের সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে এবং দ্বিতীয় আয়াতে সৃষ্টির পরবর্তীতে ডিজাইনের কথা বলা হয়েছে। আরো লক্ষ্যণীয় যে, প্রথম আয়াতে ‘হেভেন্স’ এবং দ্বিতীয় আয়াতে ‘হেভেন’ ব্যবহার করা হয়েছে। কোরআনে সাধারণত ‘হেভেন্স’ বলতে পৃথিবী ছাড়া সম্পূর্ণ মহাবিশ্বকে বুঝানো হয়েছে এবং ‘হেভেন’ বলতে আকাশকে বুঝানো হয়েছে। ‘Come both of you (heaven and earth)’ বলতে পৃথিবী ও আকাশকে বুঝানো হয়েছে। এখন যেভাবে পৃথিবী ও আকাশ পাশাপাশি অবস্থান করে একটি ভারসাম্য রক্ষা করছে, পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে হয়তো সেরকম ছিল না। আয়াত ৪১:১১ তে কিন্তু কোনভাবেই হেভেন্স ও পৃথিবীকে একত্রিত করে ‘ওয়ান ইউনিট’ বানানোর কথা বলা হয়নি। কেউ কেউ আবার আয়াত ২১:৩০ এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক অসঙ্গতিও খুঁজে পায়। তাদের ভাষায়, “বিগ-ব্যাং এর অনেক পরে যেহেতু পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু বিগ-ব্যাং এর সময় হেভেন্স ও পৃথিবী আলাদা হয় কীভাবে?” হ্যাঁ, সাদা চোখে দেখলে সেরকমই মনে হয়। পৃথিবীতে বসে যেহেতু কোরআন লিখা হয়েছে সেহেতু কোরআনে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বকে ‘হেভেন্স’ ও ‘পৃথিবী’ দ্বারা দুটি পৃথক ব্লকে ভাগ করা হয়েছে (হেভেন্স + পৃথিবী = মহাবিশ্ব)। অনুরূপভাবে, মঙ্গল গ্রহে বসে কোরআন লিখা হলে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বকে ‘হেভেন্স’ ও ‘মঙ্গল গ্রহ’ দ্বারা ভাগ করা হতো। অতএব এই পৃথিবী বর্তমান অবস্থায় অনেক পরে এলেও বিগ-ব্যাং এর সময় কি মহাবিশ্বের একটি অংশ ছিল না? নাকি পৃথিবীটা পরবর্তীতে আবার ‘শূন্য’ থেকে দ্বিতীয় বিগ-ব্যাং এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে!
অভিযোগ-১৭: কোরআনে নূহের প্লাবনের বর্ণনা অবৈজ্ঞানিক ও গাঁজাখোরী!
জবাব: কোরআনে বর্ণিত নূহের প্লাবনের বর্ণনাটা আগে দেখে নেয়া যাক:
“And it was revealed to Nuh: That none of your people will believe except those who have already believed, therefore do not grieve at what they do. And make the ark before Our eyes and (according to) Our revelation, and do not speak to Me in respect of those who are unjust; surely they shall be drowned. And he began to make the ark; and whenever the chiefs from among his people passed by him they laughed at him. He said: If you laugh at us, surely we too laugh at you as you laugh (at us). So shall you know who it is on whom will come a chastisement which will disgrace him, and on whom will lasting chastisement come down. Until when Our command came and water came forth from the valley, We said: Carry in it two of all things, a pair, and your own family– except those against whom the word has already gone forth, and those who believe.” (11:36-40)
কোরআনে এর চেয়ে বেশী কিছু নেই। কী মনে হয় পাঠক! কোন রকম ব্যাখ্যাতে যাওয়ার দরকার আছে কি? তথাপি সংক্ষেপে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হচ্ছে: (১) কোরআনে নূহের প্লাবনের দিন-তারিখ ও জাহাজের আকার-আকৃতি উল্লেখ নেই; (২) ‘সম্পূর্ণ পৃথিবী পানিতে নিমজ্জিত ছিল’–এরকম কোন কথা কোরআনে লিখা নেই, যেমনটি বাইবেলে আছে; (৩) কোরআনে যেমন সরাসরি ‘লোকাল প্লাবন’ লিখা নেই তেমনি আবার ‘গ্লোবাল প্লাবন’ বলেও কিছু উল্লেখ নেই। অতএব কোরআনে নূহের প্লাবনকে জোর করে ‘গ্লোবাল প্লাবন’ বানিয়ে দেয়ার মধ্যে তো কোন যৌক্তিকতা নেই। কোরআনে সুস্পষ্টভাবে নূহ্ (আঃ) ও তাঁর অনুসারীদের কথা বলা হয়েছে। ফলে কোরআনের বর্ণনা অনুসারে ঘটনাটি শুধু নূহের জনগোষ্ঠির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হওয়ার কথা। একটি নির্দিষ্ট এলাকাতে বড় কোন প্লাবন হওয়াটা অসম্ভব হবে কেন? ‘Carry in it two of all things’ দ্বারা মানুষ ও পশু-পাখির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এমনও হতে পারে যে, নূহের পরিবার ও আশেপাশে থেকে হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তার মধ্যে থেকেই এক জোড়া করে নেয়া হয়েছে। কোন এলাকাতে আচমকা বন্যার পানি ঢোকা শুরু করলে যা হওয়া স্বাভাবিক সেরকমই কিছু একটা হয়ে থাকতে পারে। এরকম একটি বর্ণনা পড়ে অবৈজ্ঞানিক বা গাঁজাখোরী তো দূরে থাক নিদেনপক্ষে চা-খোরী বলতেও বিবেকে বাধা দেয়ার কথা। অনেকেই দেখা যায় বাইবেলের কাহিনী দিয়ে কোরআনের সমালোচনা করে। বাইবেলে নূহের মহাপ্লাবনের বর্ণনা যারা পড়েছেন তাদেরকে নিশ্চয় নতুন করে কিছু বলতে হবে না। সেখানে এমন কিছু উপাত্ত ও বর্ণনা আছে যেগুলোর কিছুই কোরআনে নেই। এবার স্বাভাবিকভাবেই যৌক্তিক একটি প্রশ্ন চলে আসে: বাইবেলে বর্ণিত ‘বিস্তারিত অথচ অবৈজ্ঞানিক’ কাহিনীকে প্রফেট মুহাম্মদ কীভাবে ‘কাট্-ছাঁট্’ করে কপি করে স্বাভাবিক ঘটনা বানিয়ে দিলেন!
অভিযোগ-১৮: আয়াত ৮৮:৬ অনুযায়ী দোযখ বাসীদের খাদ্য শুধুই ‘Bitter Dhari’ অথচ আয়াত ৬৯:৩৬ অনুযায়ী শুধুই ‘Washing of wounds.’ তাহলে কোন্টি সত্য?
জবাব: প্রথমত, এই আয়াত দুটি একেক জন অনুবাদক একেক ভাবে অনুবাদ করেছেন। দ্বিতীয়ত, এই খাদ্যগুলো আসলে মৃত্যুপরবর্তী জীবনে দোযখ বাসীদের জন্য। ফলে ‘Bitter Dhari’ ও ‘Washing of wounds’ এর মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি-না সেটা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। তবে বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ফল বলতে সাধারণ অর্থে যে কোন ফল বুঝায়। কিন্তু তেঁতুল বলতে নির্দিষ্ট একটি ফলকে বুঝায়। অনুরূপভাবে, ‘Bitter Dhari’ ও ‘Washing of wounds’ এর মধ্যে একটি সাধারণ শ্রেণীর খাদ্য এবং অন্যটি নির্দিষ্ট কোন শ্রেণীর খাদ্য হতে পারে। নির্দিষ্ট শ্রেণীর খাদ্য হয়তো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর দোযখ বাসীদের দেয়া হবে। অতএব কোন অসঙ্গতি নেই।
অভিযোগ-১৯: কোরআনের অনেক আয়াতে সাত আসমানের কথা লিখা আছে (৬৫:১২, ২:২৯, ২৩:১৭, ২৩:৮৬, ৪১:১২, ৬৭:৩, ৭১:১৫, ৭৮:১২)। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানে সাত আসমান বলে কিছু নেই!
জবাব: এই আয়াতগুলোর অনুবাদে কোন কোন অনুবাদক ‘Seven heavens’, কেউ কেউ ‘Seven firmaments’, এবং কেউ বা আবার ‘Seven universes’ লিখেছেন। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন যে, এই পৃথিবীর উপরিভাগে সত্যি সত্যি সাতটি স্তর আছে (যেমন: Troposphere, Stratosphere, Mesosphere, Thermosphere, Exosphere, Ionosphere, and Magnetosphere.)। অন্যদিকে আবার কিছু বিজ্ঞানী মাল্টিভার্সের সম্ভাবনার কথাও বলছেন। আরবিতে ‘সাত’ সংখ্যার দ্বারা আক্ষরিক অর্থে যেমন সাত বুঝায় তেমনি আবার অনির্দিষ্টসংখ্যকও বুঝানো হয়। ফলে পৃথিবীর উপরিভাগে একাধিক স্তর হোক অথবা একাধিক মহাবিশ্ব হোক–যে কোন দিক দিয়ে কোরআনের সত্যতাই প্রমাণিত হবে!
অভিযোগ-২০: কোরআনে সাতটি পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে (৬৫:১২)। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান তো এখন পর্যন্তও অন্য কোন পৃথিবী আবিষ্কার করতে পারেনি!
জবাব: এই আয়াতের দু’রকম ব্যাখ্যা আছে। প্রথম ব্যাখ্যা দ্বারা এই পৃথিবীর মধ্যভাবে সাতটি স্তরকে বুঝানো হয়। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা দ্বারা এই পৃথিবীর অনুরূপ সাতটি আলাদা পৃথিবীকে বুঝানো হয়। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন যে, এই পৃথিবীর মধ্যভাবে সত্যি সত্যি একাধিক স্তর আছে (যেমন: Crust, Mantle, Inner core, Outer core, etc.)। অন্যদিকে আবার কিছু বিজ্ঞানী একাধিক পৃথিবীর সম্ভাবনার কথাও বলছেন। এক্ষেত্রেও যে কোন দিক দিয়ে কোরআনের সত্যতাই প্রমাণিত হবে! কোরআনের মিরাকলের যেন শেষ নেই! নব্য বিজ্ঞান-লাভার ও অন্ধ-সমালোচকদের রাতের ঘুম হারাম!
অভিযোগ-২১: যে আল্লাহ সাধারণ ম্যাথ জানেন না, তিনি আবার এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হয় কীভাবে! কোরআনের ইনহেরিটেন্স ল্য’র মধ্যে গাণিতিক ভুল আছে!
জবাব: কোরআনের ইনহেরিটেন্স ল্য এতটাই জটিল যে, সেই ল্য পড়ে গাণিতিক ভুল ধরা তো দূরে থাক, যে কারো মাথা ঘোরা শুরু করে দেবে।। সত্যিই কিন্তু তাই। অথচ টম-ডিক-হ্যারি’রা নাকি আয়াতগুলো পড়েই গাণিতিক ভুল ধরে ফেলে! প্রাসঙ্গিক আয়াতগুলো পড়ে দেখা যেতে পারে (৪:৭-১২, ৭৬)। আয়াতগুলো পড়ে কোন রকেট সায়েন্টিস্টও সেখানে গাণিতিক ভুল ধরতে পারবেন না–এমনকি ভুল থাকলেও। ভুল ধরার জন্য প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হচ্ছে সেরকম মন-মানসিকতা। যাহোক, যেভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, কোরআনের ইনহেরিটেন্স ল্য সেরকম অ্যাবসলিউট কিছু নয়। কারণ ৪:৮ নাম্বার আয়াতে সুস্পষ্ট করেই বলা আছে, “সম্পত্তি বণ্টনের সময় যদি আত্মীয়-স্বজন, এতীম, ও মিসকীন উপস্থিত হয়, তবে তা থেকে তাদের কিছু দেবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে।” অতএব এই আয়াত অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজন, এতীম, ও মিসকীনদেরকে সম্পত্তির কিছু অংশ দিয়ে দিলে গাণিতিক ভুল ধরার কোন সুযোগ থাকে না। ৪:৮ নাম্বার আয়াতকে বাদ দিয়ে যেভাবে ‘১’ হিসাব মিলানোর ফন্দি আঁটা হয়েছে, যদিও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে, কোরআনের হিসাব সেরকম সহজ-সরল কিছু নয়। এমনকি কোন কোন স্কলার কোরআনের ইনহেরিটেন্স ল্য’কে মিরাকিউলাস বলে অভিহিত করেছেন
অভিযোগ-২২: নামাজ-রোযার সময়সূচি অবৈজ্ঞানিক–কারণ মেরু অঞ্চলে বা এরোপ্লেনে নামাজ-রোযা করা সম্ভব নয়!
জবাব: এ পর্যন্ত কাউকেই কোরআনের আলোকে বিষয়টির সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। যদিও আরজ আলী মাতুব্বরের অনেক প্রশ্নই যৌক্তিক তথাপি উনি মূলতঃ প্রচলিত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রশ্নগুলো করেছেন। কোরআনের সাথে সেগুলোর কোন সম্পর্ক নেই বললেই চলে। এখন কেউ যদি উনার সমালোচনাকে সত্য হিসেবে ধরে নিয়ে কোরআনকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে সেটা কতটুকু যৌক্তিক হবে! তবে হ্যাঁ, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে নামাজ-রোযার সময়সূচিকে সন্দেহযুক্ত বলেই মনে হয়। কিন্তু তাতে তো কোরআন অবৈজ্ঞানিক হয়ে যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আয়াত দেখে নিতে হবে:
22.78: God has imposed No hardship on you in practicing your religion.
33.21: The Messenger of God has set up a good example for those among you who seek God and the Last Day, and constantly think about God.
কোরআনের নামাজ-রোযা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফলে যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের প্রশ্ন নেই–যেখানে সময় পরিবর্তনের প্রশ্ন নেই–সেখানে নামাজ-রোযারও প্রশ্ন নেই। কোন এলাকাতে যদি বছরে একবার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় সেই এলাকার লোকজন তাদের নামাজ-রোযার সময়সূচি এভাবে সাজাতে পারে: (ক) আয়াত ২২:৭৮ এর ভিত্তিতে বছরে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারে; তবে রোযা করতে হবে না, কারণ একটানা ছয় মাস রোযা থাকা সম্ভব নয়; অথবা (খ) আয়াত ৩৩:২১ এর ভিত্তিতে প্রফেট মুহাম্মদের সুন্নাহ অনুসরণ করতে পারে। কোরআনে যে রুম রাখা হয়েছে সে অনুযায়ী আয়াত ২২:৭৮ ও ৩৩:২১ এর ভিত্তিতে যে কোন স্থানের লোকজন তাদের নিজেদের মতো করে নামাজ-রোযার সময়সূচি তৈরী করে নিতে পারে। এবার বিষয়টিকে কি অবৈজ্ঞানিক মনে হচ্ছে? তবে একতার স্বার্থে ৩৩:২১ এর ভিত্তিতে প্রফেট মুহাম্মদের সুন্নাহ অনুসরণ করাটাই বেশী যৌক্তিক।
অভিযোগ-২৩: আয়াত ৭:৫৪ অনুযায়ী ৬ দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা হয়েছে অথচ আয়াত ৪১:৯-১২ অনুযায়ী মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে ৮ দিন লেগেছে। অতএব আয়াত দুটি সাংঘর্ষিক!
41.9: Say: What! do you indeed disbelieve in Him Who created the earth in two periods.
41.10: And He made in it mountains above its surface, and He blessed therein and made therein its foods, in four periods.
41.12: So He ordained them seven heavens in two periods, and revealed in every heaven its affair.
জবাব: প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রের মতো না বুঝে সবগুলো সংখ্যা যোগ করলেই তো আর হলো না! কারণ সংখ্যাগুলো একে অপরের সাথে ওভারল্যাপও তো করতে পারে। যেমন কেউ যদি বলেন: বাড়িটা তৈরী করতে ৫০ দিন লেগেছে এবং রং করতে লেগেছে ৫ দিন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাড়িটা তৈরী করতে মোট ৫৫ দিন নাকি ৫০ দিন লেগেছে? প্রাইমারীর ছাত্র হয়তো ৫৫ দিন বলতে পারে তবে কলেজের ছাত্র কিন্তু ৫০ দিনই বলবে। যাহোক, কোরআনের কোথাও কিন্তু ৮ দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা লিখা নেই। এটি আসলে সমালোচকদের অজ্ঞতা অথবা নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা। কোরআনের বেশ কিছু আয়াতে যেহেতু ৬ দিন উল্লেখ আছে এবং আয়াত ৪১:৯-১২ তে যেহেতু ধাপে-ধাপে কিছু বর্ণনা দেয়া আছে সেহেতু মোট দিনের সংখ্যা ৬ দিন মাথায় রেখেই ওভারল্যাপিং দেখতে হবে। তবে হ্যাঁ, ৯ অথবা ১২ নাম্বার আয়াতে যদি ২ এর অধিক দিন অথবা ১০ নাম্বার আয়াতে যদি ৪ এর অধিক দিন লিখা থাকতো সেক্ষেত্রে কিন্তু কোনভাবেই ওভারল্যাপিং করানো সম্ভব হতো না। কোরআনের মিরাকল দেখলেন তো! অতএব এখানে ব্যাখ্যার সুস্পষ্ট একটি রুম রয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে ৯ নাম্বার আয়াতের ২ দিন আলাদাভাবে গণনায় আসবে না–এই ২ দিন তার পরের আয়াতের সাথে মিলে যাবে।
অভিযোগ-২৪: কোরআনে বলা হয়েছে পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে না–অতএব অবৈজ্ঞানিক!
জবাব: প্রথমত, কোরআনের কোথাও পৃথিবীকে স্থির তথা নিজ অক্ষের উপর না ঘোরার কথা বলা হয়নি। কোরআনের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচারের মধ্যে এটিও একটি। দ্বিতীয়ত, কেউ কি কোরআন থেকে অকাট্য যুক্তির সাহায্যে দেখাতে পারবেন যে পৃথিবী সত্যি সত্যি ঘুরছে না? উত্তর হচ্ছে, মোটেও না। তাহলে বছরের পর বছর ধরে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে কেন! নীচের আয়াতগুলো দিয়ে তাদের দাবিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়।
15.19: And the earth We have spread out (like a carpet); set thereon mountains firm and immovable; and produced therein all kinds of things in due balance.
27.61: Who has made the earth firm to live in; made rivers in its midst; set thereon mountains immovable; and made a separating bar between the two bodies of flowing water.
আয়াতগুলোতে ‘Immovable’ শব্দটা দেখেই পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়েছে! কিন্তু এখানে ‘Immovable’ বলতে পর্বতমালাকে বুঝানো হয়েছে, পৃথিবীকে নয়। দ্বিতীয় আয়াতে ইউসুফ আলীর অনুবাদে ‘Who has made the earth firm to live in’ বলতে পৃথিবীর শক্ত (Firm/Solid: Having a solid or compact structure that resists stress or pressure–Merriam-Webster Dictionary) উপরিভাগকে বুঝানো হয়েছে, যার উপর পর্বতমালা ও নদী-নালা তৈরী হয়েছে। পৃথিবীর উপরিভাগ মধ্যভাগের মতো গলিত পদার্থ দ্বারা তৈরী হলে তার উপর কিন্তু পর্বতমালা ও নদী-নালা তৈরী হতো না। পুরো আয়াতটা তো পড়তে হবে। তাছাড়া শাকিরের অনুবাদে কিন্তু ‘Restingplace’ লিখা হয়েছে। পিকথালের অনুবাদে ‘Fixed abode’ দেখে সম্ভবত ‘পৃথিবী ঘুরছে না’ ধরে নেয়া হয়েছে! ‘Fixed abode’ এর ব্যাখ্যা হচ্ছে পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর প্রচন্ড বেগে ঘোরা সত্ত্বেও মানুষ ও অন্যান্য জীবের সুবিধার জন্য পৃথিবীকে আপাতদৃষ্টিতে স্থির অবস্থায় রাখা হয়েছে। অন্যথায় পৃথিবীতে জীবনযাত্রা ব্যহত হতে পারতো। কোরআনে অন্যান্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগে পর্বতমালা স্থাপন করে ঝাঁকুনিকে প্রতিরোধ করা হয়েছে। নীচের আয়াত দুটি দিয়েও ‘পৃথিবী ঘুরছে না’ প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়।
30.25: And one of His signs is that the heaven and the earth subsist by His command.
35.41: It is God Who sustains the heavens and the earth, lest they cease (to function).
প্রথম আয়াতে ‘Subsist by His command’ বলতে ‘পৃথিবী ঘুরছে না’ ধরে নেওয়া হয়েছে! অথচ ‘Subsist’ শব্দের অর্থ কিন্তু ‘ঘুরছে না’ নয়। তাছাড়া আয়াতটাতে হেভেন ও পৃথিবী উভয়েরই কথা বলা হয়েছে, শুধুই পৃথিবীর কথা বলা হয়নি। দ্বিতীয় আয়াতে ‘Who sustains the heavens and the earth, lest they cease to function’ কথাটার দ্বারা পৃথিবী ও গ্রহ-নক্ষত্রের যথাযথ কার্য-প্রণালীকে বুঝানো হয়েছে, কোনভাবেই ‘পৃথিবী ঘুরছে না’ বুঝানো হয়নি।
কী মনে হয় পাঠক! উপরের আয়াতগুলো থেকে কি বলা যাবে যে পৃথিবী ঘুরছে না? কোরআনে পৃথিবীর ঘূর্ণনের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি যেমন কোন আয়াত নেই তেমনি আবার এমন কোন আয়াতও নেই যেখানে থেকে কেউ অকাট্য যুক্তির সাহায্যে পৃথিবীর ঘূর্ণনকে থামিয়ে দিতে পারে।। তবে কোরআনে পৃথিবীর ঘূর্ণনের স্বপক্ষেই কিছু ইঙ্গিত আছে (২৭:৮৮, ৫৫:১৭-১৮, ২১:৩৩)। কোরআনের আলোকে পৃথিবী আসলে ঘূর্ণায়মান। যদিও পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর প্রচন্ড বেগে ঘুরছে তথাপি আপাতদৃষ্টিতে পৃথিবীকে স্থির তথা অনড় মনে হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ ফুটবল বা বেলুনের মত মসৃণ হলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে হয়তো ঝাঁকুনির সৃষ্টি হতো। কোরআনে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগে পর্বতমালা স্থাপন করে ঝাঁকুনিকে প্রতিরোধ করা হয়েছে। ফলে কোরআনে যদি পৃথিবীকে ‘স্থির’ তথা ‘অনড়’ মনে করা হতো তাহলে পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করে ঝাঁকুনি প্রতিরোধের কথা কোনভাবেই আসতো না। অতএব কোরআনে সুস্পষ্টভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণনের স্বপক্ষেই ইঙ্গিত আছে। চ্যালেঞ্জ থাকলো অথচ এই আয়াতগুলো নিয়েই বোকার মতো বেশ হাসি-তামাসা ও কৌতুক করা করা হয় এবং সেই সাথে উল্টোদিকে কোরআনের পৃথিবীর ঘূর্ণনকে জোর করে থামিয়েও দেয়া হয়! কিছু নমুনা দেখুন:
31.10: He created the heavens without any pillars that ye can see; He set on the earth mountains standing firm, lest it (the earth) should shake with you.
16.15: And He has set up on the earth mountains standing firm, lest it (the earth) should shake with you.
21.31: And We have set on the earth mountains standing firm, lest it (the earth) should shake with them (mountains).
অভিযোগ-২৫: কোরআনে যেহেতু পৃথিবীকে বেড ও কার্পেটের সাথে তুলনা করা হয়েছে সেহেতু পৃথিবীর আকারকে ডিস্কের মতো সমতল মনে করা হয়েছে–অতএব অবৈজ্ঞানিক!
জবাব: প্রথমত, কোরআনের কোথাও পৃথিবীর আকারকে সমতল বলা হয়নি। কোরআনের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচারের মধ্যে এটিও একটি।। নীচের আয়াতগুলো দিয়ে কোরআনের পৃথিবীকে সমতল বানানোর চেষ্টা করা হয়। দ্বিতীয়ত, কেউ কি অকাট্য যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে কোরআনের পৃথিবীকে সমতল বানাতে পারবেন? উত্তর হচ্ছে, মোটেও না
20.53: YUSUFALI: “He Who has, made for you the earth like a carpet spread out; has enabled you to go about therein by roads (and channels); and has sent down water from the sky.” With it have We produced diverse pairs of plants.
PICKTHAL: Who hath appointed the earth as a bed and hath threaded roads for you therein and hath sent down water from the sky and thereby We have brought forth divers kinds of vegetation.
15.19: And the earth We have spread out (like a carpet); set thereon mountains firm and immovable; and produced therein all kinds of things in due balance.
51.48: And We have spread out the (spacious) earth: How excellently We do spread out!
71.19: And God hath made the earth a wide expanse for you.
তাদের যুক্তি হচ্ছে, কোরআনে যেহেতু পৃথিবীকে বেড ও কার্পেটের সাথে তুলনা করা হয়েছে সেহেতু কোরআনে পৃথিবীর আকারকে সমতল মনে করা হয়েছে! কিন্তু এই ধরণের যুক্তিকে কু-যুক্তি ছাড়া অন্য কিছু বলা যেতে পারে না। কারণগুলো নিম্নরূপ:
১। সাদা চোখে পৃথিবীকে যেমন সমতল মনে হয় তেমনি আবার কিন্তু বৃত্তাকারও মনে হয়। বরঞ্চ সমতলের চেয়ে বৃত্তাকারই বেশী মনে হয়। কারণ উঁচু কোন পাহাড়ের উপর থেকে পৃথিবীকে কিছুটা হলেও উত্তল দেখায়। তা-ই যদি হয় তাহলে সাদা চোখের জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীর আকারকে কোনভাবেই বেডের সাথে তুলনা করা হতো না। কারণ এই পৃথিবীর কারো বাড়িতে বৃত্তাকার বেড আছে বলে মনে হয় না, যদি না কেউ এই লেখাটি পড়ে তড়িঘড়ি করে একটি বৃত্তাকার বেড বানিয়ে নেয়! সমালোচকরা সারা জীবন ধরে চতুর্ভুজাকৃতির বেডে শুয়ে থেকেও কোরআন পড়তে যেয়ে কোরআনের পৃথিবীকে জোর করে সমতল বানানোর জন্য সেই বেডকেই আবার ‘বৃত্তাকার’ কল্পনা করে! তাছাড়া তারা হয়তো ‘বেড’ বলতে কাঠ অথবা লোহার তৈরী চতুর্ভুজাকৃতির ফ্রেমকে বুঝে থাকে! ওয়েল, তা-ই যদি হয় তাহলে বেড এর চার পা ও স্ট্যান্ড থাকলেও কোরআনের কোথাও কিন্তু পৃথিবীর চার পা ও স্ট্যান্ড এর কথা বলা হয়নি! অধিকন্তু যাদের বাড়িতে কাঠ অথবা লোহার তৈরী বেড নেই তারা কিন্তু মেঝেতেই শুয়ে থাকে।। যাহোক, বেড বলতে সাধারণত নরম গদিকে বুঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ বেড তাকেই বলা হয় যেখানে আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নেয়া যায়। বেডে মানুষ যতটা আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নিতে পারে, মরুভূমির উত্তপ্ত বালুচরে ততটা আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নিতে পারে না। ফলে মরুভূমির উত্তপ্ত বালুচরকে কিন্তু বেড বলা যাবে না। বেড এর সাথে মরুভূমির পার্থক্য ইতোমধ্যে নিশ্চয় পরিস্কার। তাছাড়া বেড সাধারণত প্রটেকটিভ জায়গার মধ্যে রাখা হয় যাতে করে সূর্যের তাপ ও ক্ষতিকর রশ্মি, ঝড়-বৃষ্টি, হিংস্র জন্তু, ও বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের হাত থেকে জীবন বাঁচানো যায়। এবার আসা যাক কোরআনের ক্ষেত্রে। কোরআনে পৃথিবীকে বেড বা কার্পেট এর সাথে তুলনা করে পৃথিবীর আকার-আকৃতিকে বুঝানো হয়নি। বরঞ্চ এই তুলনাটা অত্যন্ত যৌক্তিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা সবাই জানি এ পর্যন্ত যতগুলো গ্রহ-উপগ্রহ আবিষ্কার করা হয়েছে তার মধ্যে পৃথিবী একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রহ, যেখানে পানি-বাতাস ও জীবের অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ পৃথিবী নামক গ্রহে মানুষ ও অন্যান্য জীব-জন্তু-উদ্ভিদ যত সহজে বসবাস করতে পারে, যত সহজে আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নিতে পারে, সর্বোপরি যত সহজে বেঁচে থাকতে পারে, অন্য কোন গ্রহে যেয়ে তত সহজে বসবাস করা কিন্তু অসম্ভব। বেড এর সাথে উত্তপ্ত মরুভূমির যেমন সম্পর্ক–পৃথিবী নামক গ্রহের সাথে অন্যান্য গ্রহেরও অনুরূপ সম্পর্ক। আর এ কারণেই কোরআনে পৃথিবীকে বেড এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।। আয়াতগুলো পড়লেই বুঝা যায়। বেডকে যেমন প্রটেকটিভ জায়গার মধ্যে রাখা হয় তেমনি পৃথিবীকেও প্রটেকটিভ আবরণের মধ্যে রাখা হয়েছে (২১:৩২)। ফলে তাদের কাছে এই পৃথিবীটাই একটি বেড অর্থাৎ কোরআনে পৃথিবীকে বেড এর সাথে তুলনা করে পৃথিবীকে বসবাস ও জীবন ধারণের উপযোগী বুঝানো হয়েছে, পৃথিবীর আকার-আকৃতিকে বুঝানো হয়নি
২। কোরআনের এই আয়াতগুলোতে ‘Shape’ ও ‘Flat’ শব্দ দুটির কোনটিই ব্যবহার করা হয়নি। সুতরাং আয়াতগুলোতে আসলে কী বুঝাতে চাওয়া হয়েছে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। প্রথমত, কিছু অনুবাদক ‘কার্পেট’ ও ‘বেড’ শব্দ দুটি ব্যবহারই করেননি। দ্বিতীয়ত, কার্পেটিং করতে হলে রাস্তা-ঘাট সরল রেখার মতো সমতল হতেই হবে, এমন আজগুবি কথা কে বলেছে! পাহাড়ের উপর দিয়ে যে রাস্তা তৈরী করা হয় সেটি তো বক্রাকার বা অর্ধবৃত্তাকার। সেই অর্ধবৃত্তাকার রাস্তায় কি কার্পেটিং করা হয় না? ফলে গোলাকার বস্তুর উপর কার্পেট বিছানো যাবে না কেন? ফুটবলের উপরের চামড়াকেও তো এক অর্থে কার্পেট বলা যেতে পারে। কেস ডিসমিস। ঘরের মেঝেতে মানুষ কার্পেট বিছায় মূলতঃ কিছু কারণে: মেঝে খসখসে হলে; মেঝে ঠান্ডা হলে; মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য; ইত্তাদি। রাস্তায় যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য যেমন কার্পেটিং করা হয়, পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগকেও মানুষের বসবাস ও ফসল ফলানোর উপযোগী করার জন্য কার্পেটিং করা হয়েছে। পৃথিবীর মধ্যভাগ বসবাস ও ফসল ফলানোর উপযোগী নয়। বেডের উপর মানুষ যেমন বিশ্রাম নিতে পারে তেমনি পৃথিবীর পৃষ্ঠেও বিশ্রাম নিতে পারে। আর এ কারণেই পৃথিবীকে বেডের সাথে তুলনা করা হয়েছে, পৃথিবীর মধ্যভাগ বিশ্রামযোগ্য নয়। অতএব প্রচলিত বেডের আকার সমতল না হয়ে অন্য কিছু হলেও সেই বেডের সাথেই হয়তো তুলনা করা হতো। তাছাড়া স্ফেরিক্যাল বেডও তো অসম্ভব কিছু নয়। পুরো পৃথিবীকে একটি বিশাল স্ফেরিক্যাল বেড ধরে নেয়াটা অযৌক্তিক হবে কেন? আয়াতগুলোতে কিছু শব্দ যেমন Bed, Carpet, Spread out, Expanse ইত্যাদি দেখেই পৃথিবীর আকারকে সমতল ধরে নেয়া হয়েছে! কিন্তু Bed, Carpet, Spread out, Expanse ইত্যাদি বলতে যে সমতল হতেই হবে তার কোন যৌক্তিকতা নেই।। ফলে ‘এক্সপ্যান্ড’ ও ‘স্প্রেড’ শব্দ দুটি কোরআনের জন্য অর্থবহ। কোরআনের কিছু আয়াত পড়ে অনুমান করা যায় যে, পৃথিবীটা বর্তমান অবস্থায় হুট করে আসেনি
৩। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন আনুবাদক বিভিন্ন রকম শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন আয়াত ২০:৫৩ এর বিভিন্ন অনুবাদ লক্ষ্যণীয়:
[Qaribullah]: It is He who has made for you the earth as a cradle.
[Khalifa]: He is the One who made the earth habitable for you.
[YUSUFALI]: He Who has, made for you the earth like a carpet.
[PICKTHAL]: Who hath appointed the earth as a bed.
[SHAKIR]: Who made the earth for you an expanse.
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পাঁচজন অনুবাদক পাঁচ রকম শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং সবগুলোই আসলে যৌক্তিক, যার ব্যাখ্যা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্ধ-অজ্ঞ সমালোচকদের ‘বিভ্রান্তি’ এড়ানোর জন্য ক্বারিবুল্লাহ ও রাশাদ খলিফা যথাক্রমে ‘ক্রেডল’ ও ‘হ্যাবিটেবল’ ব্যবহার করেছেন। কেস ডিসমিস। অনুবাদের ক্ষেত্রে যে অনুবাদকে সবচেয়ে বেশী যৌক্তিক মনে হবে সেটা গ্রহণ করাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু বিভিন্ন অনুবাদ থেকে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু শব্দ বেছে নিয়ে একটি গ্রন্থকে ভুল বা অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করার চেষ্টা করা অযৌক্তিক। কারণ অনুবাদের ক্ষেত্রে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ কোরআন বা যে কোন গ্রন্থকেই দিতে হবে। কোরআনে এমন কোন আয়াত নেই যেখানে থেকে কেউ পৃথিবীর আকারকে অকাট্য যুক্তি দিয়ে সমতল বানাতে পারে। চ্যালেঞ্জ থাকলো।
এবার পজেটিভ অ্যাপ্রোচ নেয়া যাক। কোরআনে সমতল পৃথিবীর পরিবর্তে বরং স্ফেরিক্যাল পৃথিবীরই ইঙ্গিত আছে। যেমন: (ক) আয়াত ৮৪:৩-৪ তে মহাপ্রলয় দিবস সম্পর্কে বলা হয়েছে, “And when the earth is flattened out, and casts forth what is in it and becomes empty.” কোরআনের আলোকে পৃথিবীর আকার যদি সমতলই হতো তবে তাকে প্রলয়দিনে আবার সমতল বানানোর প্রশ্ন আসবে কেন, তাই না? সমতল পৃথিবীকে আবার সমতল বানানো এবং সেই সাথে খালি করার প্রশ্ন কিন্তু অবান্তর। পৃথিবীকে সমতল ও খালি করার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন পৃথিবীর আকার স্ফেরিক্যাল হবে। (খ) কিছু স্কলারের মতে আয়াত ৭৯:৩০ তে পৃথিবীকে ডিমের মতো বলা হয়েছে। আরো দেখুন:
31.29: Seest thou not that God merges Night into Day and he merges Day into Night.
Note: Merging here means that the night slowly and gradually changes to day and vice versa. This phenomenon can only take place if the earth is spherical. If the earth was flat, there would have been a sudden change from night to day and from day to night.
39.5: He makes the Night overlap the Day, and the Day overlap the Night.
Note: The Arabic word used here is Kawwara meaning ‘to overlap’ or ‘to coil’ – the way a turban is wound around the head. The overlapping or coiling of the day and night can only take place if the earth is spherical.
55.17-18: Lord of the two Easts and the two Wests. Then which of the favours of your Lord will ye deny?
[Note: The question of two Easts and the two Wests does only arise if the earth is spherical.]
অতএব দেখা যাচ্ছে যে কোরআনের আলোকে পৃথিবীর আকার আসলে স্ফেরিক্যাল, কোনভাবেই সমতল নয়। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর আকারকে বাস্তবে কোন কিছুর সাথেই তুলনা করা যায় না। কেউ কেউ বলেন কমলালেবুর মতো। কেউ কেউ আবার বলেন কুমড়ার মতো। তবে কোনটাই কিন্তু পুরোপুরি সঠিক নয়। ইন্টারনেটে পৃথিবীর অনেক ইমেজ আছে কিন্তু কমলালেবুর মতো ‘দুই সাইড চ্যাপ্টা এবং কিছুটা ভেতর দিকে ঢুকে গেছে’ এরকম কোন ইমেজ দেখা যায় না। আর তা-ই যদি হয় তাহলে পৃথিবীকে ডিমের সাথে তুলনা করাই বেশী যৌক্তিক। কারণগুলো হচ্ছে: (১) কমলালেবুর মতো ডিমও স্ফেরিক্যাল; (২) কমলালেবুর বোঁটা আছে, কিন্তু ডিম ও পৃথিবীর বোঁটা নেই; (৩) কমলালেবুর মধ্যে বিচি আছে, কিন্তু ডিম ও পৃথিবীর মধ্যে বিচি নেই; (৪) কমলালেবুর কেন্দ্রে কিছুটা ফাঁপা, কিন্তু ডিম ও পৃথিবীর কেন্দ্রে ফাঁপা নয়; (৫) কমলালেবুর মধ্যভাগ অনেকগুলো কোয়ার সমষ্টি এবং কোয়াগুলোকে একে অপর থেকে সহজে পৃথকও করা যায়, কিন্তু ডিম ও পৃথিবীর মধ্যেভাগ কমলালেবুর মতো নয়; (৬) ডিমের যেমন কয়েকটি স্তর আছে (শেল, শেলের নীচে পাতলা স্তর, সাদা তরল পদার্থের স্তর, হলুদ তরল পদার্থের স্তর, ইত্যাদি) পৃথিবীরও তেমনি কয়েকটি স্তর আছে (Crust, Mantle, Inner core, Outer core, etc.); (৭) ডিম ও পৃথিবী উভয়েরই পৃষ্ঠভাগ শক্ত পদার্থ এবং মধ্যভাগ নরম ও গলিত পদার্থ দ্বারা গঠিত।
নোট: কোরআনে পৃথিবীকে সরাসরি স্ফেরিক্যাল ও ঘূর্ণায়মান না উল্লেখ করে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেয়ার পেছনে যৌক্তিক একটি কারণ যেটা হতে পারে সেটা হচ্ছে, বিষয় দুটি সেই সময়ের মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য মনে হতো এবং যার ফলে তারা হয়তো কোরআনকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করতো। এমনকি নিকট অতীতেই গ্যালিলিও ও ব্রুনোর কাহিনী কে না জানে! কারণ একদিকে যেমন সেই সময়ের মানুষের কাছে ‘প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস’ বলতে পৃথিবীটা সমতল ও অনড় ছিল, অন্যদিকে আবার পৃথিবীটা যে সত্যি সত্যি স্ফেরিক্যাল ও ঘূর্ণায়মান সেটা তাদেরকে পরীক্ষা করে দেখানোও সম্ভব হতো না। ফলে বিষয় দুটি সত্য হলেও তাদের কাছে কোন তথ্যই বহন করতো না। অতএব কোরআনের মূখ্য উদ্দেশ্য “পার্থিব ও অপার্থিব গাইডেন্স” ব্যর্থ হতে পারতো। কোরআনে তেমন কোন উক্তি নেই যেটা সেই সময়ের মানুষের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্যও মনে হতে পারে।
কোন ব্যাখ্যাতেই কিন্তু রূপক-টুপকের আশ্রয় নেয়া হয়নি। সুস্পষ্ট ভুল-ভ্রান্তি বা অসঙ্গতি বা অবৈজ্ঞানিক তথ্য বলতে যা বুঝায় সেরকম কিছু কোরআনে নেই। অনুবাদের উপর ভিত্তি করে সংশয় করার মতো যে দু-চারটি বিষয় আছে সেগুলোরও যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে। তবে সেই ব্যাখ্যাগুলো সন্তোষজনক কি-না–সেটা নির্ভর করবে ব্যক্তিবিশেষ ও ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। সাধারণত প্রবাবিলিস্টিক কোন বিষয়ে বেনিফিট-অফ-ডাউট এর ভিত্তিতে পজেটিভটাকেই বেছে নিতে হয়। এই যখন বাস্তবতা তখন অ্যান্টি-ইসলামিক সাইটের উপর ভিত্তি করে কেউ ব্রেনওয়াশড হলে করার কিছু নাই! অজ্ঞ লোকজনকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অ্যান্টি-ইসলামিক সাইটগুলোতে কোরআন, হাদিস, ও প্রচলিত বিশ্বাসকে একত্রে গুলিয়ে ফেলে মনের মাধুরি মিশিয়ে শত শত ভুল-ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি লিস্ট করে রাখা হয়েছে যেগুলোর প্রায় আটানব্বই ভাগই গার্বেজ!
7 Comments to “কোরআনে অসঙ্গতি ও বৈজ্ঞানিক ভ্রম”
লেখাটি সিরিজ আকারে না দিয়ে এক বারে পোস্ট করার কারণ হচ্ছে একটি লেখাতেই সবকিছু রাখা, যাতে করে এই লিঙ্ক অন্য কোন লেখাতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে পুরো লেখাটি এক বারে পড়লে মাথা বিগরে যেতে পারে! যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে হাতের কাছে একাধিক অনুবাদ নিয়ে প্রত্যেকটি পয়েন্ট আলাদা ভাবে যাচাই করা। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন পয়েন্টে সংশয়-সন্দেহ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য কোন পয়েন্টে যাওয়া যাবে না। দেখতে হবে সেই অভিযোগটা আসলেই সত্য কি-না। এভাবে পয়েন্ট-বাই-পয়েন্ট এগোতে হবে। তাতে হয়ত দু-তিন দিন সময় লেগে যেতে পারে। কিন্তু এই দু-তিন দিন সময় সারা জীবনের জন্য কাজে লাগবে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কারো সাথে বিতর্কে অ্যাপোলজেটিক সাজতে হবে না। সেই সাথে মানসিক একটা প্রশান্তিও চলে আসবে। নীচের দুটি লিঙ্ক থেকে কোরআনের একাধিক অনুবাদ পাওয়া যাবে:
http://www.usc.edu/schools/college/crcc/engagement/resources/texts/muslim/quran/
http://www.islamawakened.com/Quran/